সর্বশেষ

অর্থের বিষয়ে সুইজারল্যান্ডের কাছে বিভিন্ন সময় তথ্য চেয়েছে সরকার

/ সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ /

প্রকাশ :


২৪খবরবিডি: 'সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা থাকা অর্থের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ। দেশটি কিছু তথ্য সরবরাহও করেছে। সর্বশেষ গত জুনে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশের পরও তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ।'
 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড জানান, সুইস ব্যাংকে রাখা অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য চাওয়া হয়নি। তাঁর এ বক্তব্য পরে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনার জন্ম দেয়। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদক বিভিন্ন সময়ে তথ্য চাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে বলেছে। রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের পরদিন বৃহস্পতিবার দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ রাখার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চাওয়া হয়েছে কিনা, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে তথ্যবিনিময়ের বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করা হবে। গভর্নরের উপস্থিতিতে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিএফআইইউ কবে-কী তথ্য চেয়েছে, তা আদালতে উপস্থাপন করা হবে। সংশ্নিষ্টরা জানান, সুইজারল্যান্ডের এফআইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের এফআইইউর আলাদা কোনো চুক্তি নেই।


-২০১৪ সাল থেকে দেশটির সঙ্গে চুক্তির জন্য কয়েক দফা চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি। তবে দুটি সংস্থাই 'এগমন্ট গ্রুপে'র সদস্য হিসেবে একে অপরের সঙ্গে নিরাপদ ওয়েবপোর্টালের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করে। এগমন্ট গ্রুপ হলো- বিভিন্ন দেশের এফআইইউর সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক ফোরাম। ২০১৩ সালে এ ফোরামের সদস্য হয় বিএফআইইউ। একসময় সুইজারল্যান্ড কোনো রকম তথ্য প্রকাশ করত না। এখন প্রতিবছর সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাদের দায় ও সম্পদের তথ্য প্রকাশ করছে। জানা গেছে, বিএফআইইউর অনুরোধে বিভিন্ন সময়ে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক বাংলাদেশের ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ জমা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে। অর্থ পাচারে সন্দেহভাজন এসব তথ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুদক ও তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে দেওয়া হয়। সংশ্নিষ্টরা জানান, এগমন্ট গ্রুপের চুক্তির আওতায় গড়পড়তা তথ্য আদান-প্রদান হয়। সরাসরি দেশটির বিএফআইইউর সঙ্গে চুক্তি করা সম্ভব হলে বিশদ তথ্য পাওয়া সহজ হতো। বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে এফআইইউ চুক্তি করলেও সুইজারল্যান্ডকে রাজি করাতে পারেনি বাংলাদেশ।
 

'বিএফআইইউর একজন কর্মকর্তা ২৪খবরবিডিকে বলেন, প্যারাডাইস, পানামা, প্যান্ডোরা পেপারস বা অন্য যে কোনো মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগ বিষয়েও সুইজারল্যান্ডের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য চাওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের দিক থেকে জবাব পাওয়া গেছে। তবে কী জবাব তারা দিয়েছে, কোনো তথ্য দিয়েছে কিনা- সেটি প্রকাশে বিধিনিষেধ থাকায় তা জানানো হয় না। তিনি জানান, পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। পাচারের সন্দেহভাজন তথ্য পাওয়ার পর প্রথমে এক দেশ থেকে আরেক দেশের প্রাথমিক গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিজ দেশে মামলা করতে হয়। মামলা প্রমাণের পর মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্সের (এমএলএ) আওতায় তথ্য চাইতে হয়। এরপর সেই দেশের আইনে যদি অপরাধ হয়, তখন অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি। বিএফআইইউ ছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তথ্যবিনিময় করে। এ ছাড়া এমএলএর আওতায় অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকেও বিভিন্ন দেশের কাছে তথ্য চাওয়া হয়।
 


'সর্বশেষ গত ১৫ জুন ২০২১ সালের বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি)। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের দায় রয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ।

অর্থের বিষয়ে সুইজারল্যান্ডের কাছে বিভিন্ন সময় তথ্য চেয়েছে সরকার

বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ফ্রাঁ ৯৫ টাকা ধরে) যা দাঁড়ায় ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকায়। দেশটিতে বাংলাদেশের যে অর্থ রয়েছে, তার মধ্যে ৮৪ কোটি ৪৫ লাখ ফ্রাঁ বা ৮ হাজার ২৩ কোটি টাকা এ দেশের ব্যাংকগুলোর। গ্রাহক আমানত রয়েছে ২ কোটি ৬৩ লাখ ফ্রাঁ বা ২৫০ কোটি টাকা।'

-গত ১৮ জুন এক সেমিনারে বিএফআইইউর অতিরিক্ত পরিচালক কামাল হোসেন বলেন, সুইস ব্যাংকে জমা অর্থের ৯৭ শতাংশই বিভিন্ন ব্যাংকের। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তির জন্য এটা রাখা হয়। বাকি ৩ শতাংশ ব্যক্তিগত আমানত। ফলে কেউ সন্দেহ করলে এই ৩ শতাংশ অর্থ নিয়ে করতে হবে। তবে এই অর্থ বাংলাদেশিদের হলেও পুরোটাই যে বাংলাদেশ থেকে গেছে, তেমন নয়। তিনি জানান, বাংলাদেশের আইনে অনুমতি ছাড়া দেশের বাইরে টাকা নিলেই তা অপরাধ। তবে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে অপরাধমূলকভাবে অর্জিত এবং কর ফাঁকির মাধ্যমে নেওয়া অর্থকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত